রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 

চোর, চুরিবিদ্যা ও টাকার কদর!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

আমি রীতিরকম সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম। সেকারণ ছাত্রজীবনে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করতে হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই সুকুমার রায়ের ‘টাকার বিপদ’ নামক গল্পটি পড়েছেন। সেই যে এক বুড়ো গরিব মুচি দিন-রাত কাজ করত আর গুনগুন করে গান গাইত। তার বাড়ির কাছে থাকত এক ধনী ব্যবসায়ী। তার অনেক টাকা, মস্ত বাড়ি। কিন্তু মনে সুখ নেই, স্বাস্থ্যও ভালো নয়। ব্যবসায়ী শুধু ভাবে গরিব মুচির এত আনন্দ কোথা থেকে আসে? তার তো সামান্য রোজগার। তারপর সে একদিন মুচির বাড়ি গিয়ে একটা টাকার থলে নিয়ে মুচিকে দিয়ে বলল, ‘এটা রেখে দাও, বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের তোমার কাজে লাগবে।’ মুচি কখনো এত টাকা একসঙ্গে দেখেনি। তার ভারী আনন্দ হলো। তারপর টাকার থলেটা নিয়ে মাটির তলায় লুকিয়ে রেখে দিল। এরপর তার নানান চিন্তা ভাবনা শুরু হলো। রাত হতেই মনে হতো, ‘এই বুঝি চোর আসছে!’ সামান্য শব্দেই সে ভয় পেতে শুরু করল। সারা রাত ঘুমাতে না পেরে মুচির জীবনের সুখ শাস্তি সব চলে গেল। এরপর মুচি টাকার থলেটা নিয়ে সেই ধনী ব্যবসায়ীর বাড়ি গিয়ে সে বলল, ‘এই রইল তোমার টাকা! এর চেয়ে আমার গান আর ঘুম ঢের ভালো!’ গরিবের হাতে বেশি টাকা এলে তা যে বিপদ ঘটায় তা তো সুকুমার রায় সেই কবেই বলে গেছেন। বাংলাদেশ এখন আসলেই টাকার বিপদে পড়ে গেছে।

চোর বেনজির-মতিউর থেকে শুরু করে ড্রাইভার আবেদ আলী’র চুরিবিদ্যা নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। হুজুগে বাঙ্গালীর মধ্যে আরও কিছুদিন চলবে। তারপর যা হবার তাই হবে। প্রচলিত আছে, ‘চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা’। এদেশে প্রাচীনকাল থেকে হাল আমলেও চুরিবিদ্যার বেশ কদর আর গুণকীর্তন লক্ষণীয়। ‘চাহিদা’ থাকায় চোরেরাও আদরনীয়। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে দেখেছি চুরি মামলা প্রমাণ করা বড় মুশকিল। শুধু মুলো চুরির ফাঁসি হয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যারা টাকা মেরে খায়-তারাও কিন্তু চোর। অথচ ‘মহাচোর’ হিসেবে পরিচিত লোকেরাই সবচেয়ে সম্মানিত। আমরাও তাদের ‘কুর্নিশ’ করতে দ্বিধা করি না। তাদের এখন পোয়াবারো।

অনেকে যেনতেন ভাবে অর্থকড়ি কামিয়ে বিলাচ্ছেন অকাতরে। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, তা নেহাত দান-দক্ষিণা নয়, ছিল বিনিয়োগ। নির্বাচনে দাঁড়িয়ে অনেকে হয়ে যান ‘জনপ্রতিনিধি’। যা ছিটান, তুলে নেন লাভসহ শতগুণ; একেবারে কড়ায়-গন্ডায়। কবি ওমর খৈয়াম রচিত বিখ্যাত সেই শের- ‘নগদ যা পাও/ হাত পেতে নাও/ বাকির খাতা শূন্য থাক/ দূরের বাদ্য লাভ কী শুনে, মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক’।

এবার একটি গল্প দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই। একবার এক চোরকে সামান্য ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির অপরাধে মৃত্যুদ- দেয়া হল। তখন সে চোর তার শেষ ইচ্ছা হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ চাইল। যখন তাকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে আসা হলো তখন সে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল স্যার, আপনার সাথে দেখা করতে চাওয়ার একটাই কারণ তা হলো, আমার কাছে এমন একটা গাছের বীজ আছে যে গাছটা মনের সব ইচ্ছাা পূরণ করতে পারে। আমি আপনার জন্য এই গাছটা রোপণ করে দিয়ে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল ‘তোমার চারা লাগাতে কত দিন লাগবে?’ চোর উত্তর দিল, ‘এইতো স্যার, সাত দিন।’ সাতদিন পর তাকে আবার মন্ত্রিসভায় হাজির করা হল। একজন জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার চারার কী খবর?’ চোর বলল, ‘আসলে জমি তো রেডি কিন্তু বীজটা পরিপক্ক হতে আরও তিনদিন লাগবে।’তিনদিন পর তাকে আবার হাজির করা হল। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘বীজ রেডি তো এবার?’ চোর বলল, ‘স্যার জমি বীজ সবই রেডি কিন্তু‘ আমিতো তা রোপণ করতে পারব না।’ প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন?’ চোর বলল, ‘এটা এমন একজনের হাতে রোপণ করতে হবে যে কোনদিন চুরি করেনি। না হলে এটা কার্যকারিতা হারাবে।’ সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন বীজ রোপন করতে।। অর্থমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার সারা দেশের অর্থ নিয়ে আমার কাজ। এত কাজের মধ্যে দু একটা তো এদিক সেদিক হতেই পারে।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পরিবহনমন্ত্রীকে। পরিবহনমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার, কত কত গাড়িঘোড়া আমার প্রতিনিয়ত অনুমোদন দিতে হয় এর মাঝে তো দু একটা এদিক সেদিক হতেই পারে।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার, এতো দেশের সাথে যোগাযোগ, এতো দেশে যাওয়া আসা, বাণিজ্য লেনদেন এর মধ্যে তো আমারও দু একটা এদিক সেদিক হতেই পারে।’ প্রধানমন্ত্রী এরপর যাকেই বলেন সেই এদিক সেদিকের দোহাই দিয়েই এড়িয়ে যায়। হঠাৎ সবাই প্রধানমন্ত্রীকে ধরলেন, ‘স্যার, আপনিই রোপণ করুন না।’ তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘তোমাদের তো দায়িত্ব¡ ছোট ছোট, আমি পুরো দেশ চালাই। আমার কি একটু আধটু এদিক সেদিক হতে পারে না!’ তখন সবাই চুপ হয়ে গেল। হঠাৎ একজন বলে উঠলেন, ‘তাহলে স্যার, এই লোক তো সামান্য একটা ম্যানহোলের ঢাকনা চোর। একে মৃত্যুদন্ড দেয়া কি ঠিক? একে ছেড়ে দেয়া হোক। আরেকজন বললেন, ‘না একে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাহলে সে বাইরে গিয়ে সব ফাঁস করে দেবে।’ সবাই চিন্তায় পড়ে গেল একে নিয়ে কী করা যায় ? তখন একজন বলল, ‘স্যার এক কাজ করুন। একে আমাদের মতোই একটা পদ দিয়ে আমাদের সাথে শামিল করে নেন।’ যেই ভাবা সেই কাজ, সেই চোর হয়ে গেল মন্ত্রীসভার সদস্য। এভাবেই মন্ত্রিসভা গঠিত হচ্ছে সারা দুনিয়ায়। এটি একটি রসাত্বক গল্প মাত্র। কারো চরিত্রের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সম্পাদক-প্রকাশ ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, seraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel